মানব দেহের জন্য মধুর উপকারিতা-মধু কেন ব্যবহার করা উচিত
মধুর উপকারিতা সম্পর্কে আমরা কম বেশি প্রায় সবাই জানি।আজকে আমরা মধু সম্পর্কে বলব, যদিও নতুন করে মধু সম্পর্কে বলার কিছুই নেই।মধু হচ্ছে একটি মহা ওষুধ ও উপকারি টনিক।শিশু থেকে বৃদ্ধ এটি সবার জন্য সমান দরকারি।
বর্তমান সময়ে মধু এতটা জনপ্রিয় যে এটা সর্বকালের সর্বত্র হয়েছে।প্রাচীনকাল থেকে মানুষ খাদ্য হিসেবে চিকিৎসা ও সৌন্দর্যের চর্চা সহ নানান ভাবে মধুর ব্যবহার করে আসছে।তাই চলুন আজকে আমরা আপনাদের জানাবো মধুর উপকারিতা গুলো সম্পর্কে।
পেজ সূচিপত্র-নিচের যে অংশ পড়তে চান ক্লিক করুন
মধু কেন ব্যবহার করা উচিত
মধুকে একদিক থেকে এক প্রকার ওষুধ বলা যায়।কারণ প্রাচীনকালে যখন মানুষ অসুস্থ হত ঠান্ডা জ্বর অথবা অন্যান্য অসুস্থতায় পড়ে যেত তখন মধু অথবা মধুর সাথে অন্য কোন উপকরণ মিশিয়ে ঔষধ হিসেবে তার সেবন করতো।মধু শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার জন্যই সমানভাবে দরকারি এবং সমানভাবে কাজ করে।এছাড়াও শরীরের সুস্থ তাই মধুর রয়েছে নানান উপকারিতা।শুধু মৌচাক নয় বিভিন্ন ফুল থেকেও মধু হয়।আর এসব মধুর সবগুলোর গুনাগুন প্রায় একই রকম।
আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা, মধুতে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান থাকে।এর মধ্যে গ্লুকোজ এবং ফ্রুক্টোজ ও মন্টোজ থাকে।আরো থাকে এমাইনো এসিড খনিজ লবণ এবং এনকাইম।প্রতি 100 গ্রাম মধুতে বিদ্যমান থাকে ২৮৮ ক্যালো্রি।তাই আমরা যারা জানতাম না যে মধু কেন ব্যবহার করা উচিত তাদের এই বিষয়গুলো সম্পূর্ণ পড়ে ধারণা নেওয়া উচিত যে মধু কেন ব্যবহার করা উচিত।তাই আমরা যারা বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় আছি তারা মধুকে ঔষধি হিসেবেও রাখতে পারি।
মধুর উপকারিতা
আমরা হয়তো অনেকেই মধু খাই কিন্তু এটা জানি না যে মধুর উপকারিতা গুলো কি কি। নিয়মিত ও পরিমিত মধু সেবন করলে যে সব উপকার পাওয়া যায়। তা হলোঃ-
- হৃদরোগ প্রতিরোধ করে।রক্তনালী প্রসারণ এর মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালনের সহায়তা করে এবং হৃদপেশির কার্যক্রম বৃদ্ধি করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- দাঁত কে পরিষ্কার ও শক্তিশালী করে
- দৃষ্টিশক্তি ও স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি করে
- মধুর রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষমতা যা আমাদের দেহকে নানান ঘাত প্রতিঘাতের হাত থেকে রক্ষা করে
- এন্টি অক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে ও কোষ কে ফ্রী রেডিকেলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে
- বার্ধক্য অনেক দেরিতে আসে
- মধুর ক্যালরি রক্তের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায় যার ফলে রক্ত বার্ধক হয়
- যারা রক্তস্বল্পতায় বেশি ভোগে বিশেষ করে মহিলারা তাদের জন্য নিয়ম সেবন করা ফলদায়ক
- গ্লাইকোজোনের লেভেল নিয়ন্ত্রিত
মধুতে এমন একটি উপাদান আছে যাতে প্রচুর এন্টি অক্সিডেন্ট আছে আর এটি আমাদের ত্বকের উজ্জ্বল রং এবং টানটান ভাব ধরে রাখে।মধু তারুণ্য ধরে রাখতে অধিক পরিমাণে সাহায্য করে থাকে। তাই আপনি যদি এতদিন মধু খেয়ে থাকেন কিন্তু মধু এর উপকারিতা গুলো সম্পর্কে না জানতেন তাহলে আপনি অবশ্যই কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়বেন এবং মেনে চলার চেষ্টা করবেন বর্তমানে থেকেও আপনি ভালো ফলাফল পাবেন আশা করা যায়
বাচ্চাদের জন্য মধুর উপকারিতা কতটুকু
মধু বাচ্চাদের এনার্জি লেভেল বৃদ্ধি করে। সকালে মাত্র এক চা চামচ মধু পারে আপনার সন্তানকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এনার্জি রাখতে।মধুতে তিন ধরনের শর্করা থাকে, সুক্রোজ, গ্লুকো্ফ্রুক্টোজ । সুক্রোজ ও গ্লুকোজ তাড়াতাড়ি হজম হয়ে যায় এবং রক্তের সরকারের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।যা শরীরে অনেকক্ষণ থাকে এবং সারাদিন এনার্জির যোগান দেয়।চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক বাচ্চাদের সর্দি কাশি কমাতে মধুর ব্যবহার ও উপকারিতা
ছোটবেলায় সর্দি কাশি বা ঠান্ডা লাগতো তখন আমাদের মায়েরা মধু ও লেবু মেশানো চা খেতে দিত। এখন এর সাইন্টিফিক প্রমাণও আছে।মধু পাড়ে শিশুর জ্বর সর্দি কাশি ঠান্ডা জনিত সকল প্রকার অসুখকে দূরে রাখতে।রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস গরম পানিতে মধু মিশিয়ে অথবা এক টেবিল চামচ মধুর সাথে তুলসী পাতার লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়ালে বেশি উপকার পেতে পারেন।চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক বাচ্চাদের তাড়াতাড়ি ঘা নিরাময় করতে মধুর ব্যবহার।
বাচ্চাদের হাত বা পা কেটে ছেড়ে গেলে বা পুড়ে গেলে ক্ষতস্থানে মধু লাগাতে পারেন।এর ফলে সে ঘা তাড়াতাড়ি সেরে উঠবে।মধুতে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টিবায়োটিক গুণ বিদ্যমান, যার শীঘ্রই ঘা সারিয়ে তুলতে অনেক সাহায্য করে।চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক বাচ্চাদের পাচনতন্ত্র মজবুত করতে মধুর ব্যবহার ও উপকারিতা।বাচ্চাদের পেট খারাপ হলে ও পেটে গ্যাস বা বদহজমের সমস্যা দেখা দিলে বা কোষ্ঠকাঠিন্য আলসার ডায়রিয়া হলো মধুর উপকারী প্রমাণিত হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ মেয়েদের জন্য কোন ফেসওয়াশ সবচেয়ে ভালো
চীনের চমৎকার একটি বিকল্প হল মধু।বৈজ্ঞানিকভাবে মধু এর উপকারিতা সর্বজন স্বীকৃত।এত উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও আমাদের মনে রাখতে হবে মধুপ প্রাকৃতিক চিনি রয়েছে।তাই প্রাকৃতিক কিংবা খাঁটি ভেবে আপনি ইচ্ছামত মধু খেতে পারেন না।ঝুকি এড়াতে আপনাকে নিয়মিত পরিমাণ মতো মধু খাওয়া উচিত।মধু আপনার শরীরকে নানান ভাবে শক্তিশালী বানাবে।খাবারের পাশাপাশি রূপচর্চ বহুদিন ব্যবহৃত হয়ে আসছে মধু।
তবে অনেকের জানা নেই যে ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।ত্বক ও চুলের যত্নে মধু অতুলনীয় একটি প্রাকৃতিক উপাদান।ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে ত্বকের বলিরেখা কমিয়ে ত্বক টানটান করতে এবং ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে ত্বককে সুরক্ষিত করতে মধুর জুড়ি নেই।পাশাপাশি এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পুষ্টিকর নানা উপাদান।কোন ধরনের প্রক্রিয়াজাতকরণ ছাড়া বিশুদ্ধ মধু বেশ উপকারী।
ত্বকের যত্নে মধুর উপকারিতা ও ব্যবহার
আয়ুর্বেদ মতে, এমন এক উপকরণ যার গুণের শেষ নেই। সৌন্দর্য চর্চায় মধু অতুলনীয়।ত্বক পরিষ্কারক হিসাবে মধুর জুড়ি নেই।সমপরিমাণ দুধ ও মধু মিশিয়ে ক্লিনজিং ক্রিম তৈরি করতে পারেন।একটি কাঁচের বয়ানে ফ্রিজে রেখে দিলে এক সপ্তাহ পর্যন্ত ব্যবহার উপযোগী থাকে।প্রতিদিন গোসলের 20 মিনিট আগে এই মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে নিন।এতে করে মুখ আগের চাইতেও মসৃণ দেখাবে।ব্রণের সমস্যা তো মধুর কার্যকারিতা অনেক।
এক চা চামচ মধু ও লবঙ্গ গুড়া মিশিয়ে ব্রনের স্থানে লাগান।ব্রণ দূর না হওয়া পর্যন্ত নিয়মিত ব্যবহার করুন।ত্বকের উজ্জ্বলতার জন্য মধুর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।ত্বকের দাগ ছোপ ও মণিলতা প্রশনে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সপ্তাহে অন্তত ২-৩ দিন ব্যবহার করতে পারেন মধুর ফেসপ্যাক।হাফ চা চামচ মধু ও আধা চা চামচ টমেটোর রস মিলিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন এই ফেস প্যাকটি।
রূপচর্চা বিষয়ক একটা ওয়েবসাইটে ত্বক চুল এবং নখের উজ্জ্বলতা বাড়াতে মধুর ব্যবহারের কিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়।মধু এক ধরনের প্রাকৃতিক মশ্চারাইজার।এটি বাতাস থেকে জলীয় কণা ত্বকের ভিতর ট্রেনে নেই যা ত্বকের গভীরে নমনীয়তা ধরে রাখতে সাহায্য করে।দীর্ঘ সময় ত্বকের নমনীয়তা ধরে রাখতে মধু দারুন উপকারি।নিয়মিত এক চা চামচ পরিমাণ মধু পরিষ্কার ও শুষ্ক ত্বকে লাগিয়ে 15 থেকে 20 মিনিট পরে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে ত্বক হবে কোমল ও মসৃণ।
মধুতে আছে এনজাইম যা ত্বক লোমকূপের গভীরে থাকা ময়লা পরিষ্কার করে।এছাড়া মধুতে আন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান,জজবা বা নারিকেল তেল ত্বককে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া হাত থেকে রক্ষা করে।
চুলের যত্নে মধুর উপকারিতা ও ব্যবহার
মধু শুধু তো ত্বকে নয় চুলের যত্নে দারুন কার্যকরী।আপনার চুলের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে চুলকে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে সাহায্য করে মধু।তাই ঘরে বসে বানিয়ে নিতে পারেন কলা ও মধুর হেয়ারপ্যাক।এজন্য প্রথমে দুইটা কলা দুইটা চামচ মধু ভালো করে ব্লেন্ড করে নিতে হবে।এরপর এটি চুলের গোড়া থেকে আগ পর্যন্ত ব্রাশের সাহায্যে লাগিয়ে এরপর শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে মাথা ঢেকে রাখুন।এক ঘন্টা পর নরমাল ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
আরো পড়ুনঃ মাত্র এক সপ্তাহে চুল পড়া বন্ধ করবেন কিভাবে
সপ্তাহে দুইবার এই প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন।এই প্যাকটি চুলের মশ্চারাইজার ধরে রাখে এবং চুল ঘন সিনকি করতে সাহায্য করে।তবে মধু ব্যবহারেও রয়েছে কিছু সতর্কতা।কেননা অন্য কোন উপকরণ ছাড়া সরাসরি মধু রূপচর্চার জন্য ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।এবং মধুতে এলার্জি থাকলে অবশ্যই তা পরিহার করুন।চুল হাইলাইট বর্তমান ফ্যাশনের দারুন জনপ্রিয়।তবে রাসায়নিক রং চুলের ক্ষতি করতে পারে এই ভয়ে অনেকেই চুলের রং এড়িয়ে চলেন।
তবে মধুর বিশেষ কোনো উপাদান আছে যা ধীরে ধীরে চুলের রং হালকা করতে সাহায্য করে অর্থাৎ প্রাকৃতিকভাবে চুল হাইলাইট করার জন্য দারুন কার্যকর মধু।
লেখকের শেষ কথা
আজকের আর্টিকেলে আলোচনার বিষয় ছিল মধুর উপকারিতা ও মধুর সাহায্যে ত্বকের চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধির বিভিন্ন ঘরোয়া পদ্ধতি সম্পর্কে।আশা করা যায় আজকের আর্টিকেল থেকে আপনারা মধুর বিভিন্ন গুনাগুন সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়লে এবং আমাদের দেওয়ার টিপস ও ট্রিকসগুলো ফলো করলে আপনারা উপকৃত হবেন।আমি এসব বিষয়গুলো নিজে মেনে উপকৃত হয়েছি এজন্য আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পারলাম।
মধু নিয়ে আপনাদের আরো কোন তথ্য জানা থাকলে অতি অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানিয়ে যাবেন। আমরা আপনাকে দ্রুতই আপনার তথ্যের উত্তর দেওয়ার জন্য সাহায্য করবো।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url