মুখের ব্রণ দূর হবে কিভাবে-ব্রণ দূর করার ঘরোয়া ১০টি উপায়
বর্তমান সময়ে আমাদের সমাজে ছেলে এবং মেয়ে উভয়েরই একটি খুব কমন সমস্যা হচ্ছে ব্রণ।মুখের ব্রণ দূর করার জন্য আমরা সবাই অনেক হতাশ।ব্রণ বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের হয়ে থাকে।এই ব্রণকে মেডিকেলের ভাষায় অ্যাকনি বলা হয়ে থাকে।
আমাদের মুখে ব্রণ ও ব্রণের দাগ দেখা দিলে আমাদের মুখের সৌন্দর্য অনেকটাই কমে যায়।আর এই সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা কত কি করি। কিন্তু ব্রণ দূর করতে পারি না, তাই আজকে আমরা আপনাকে জানাবো মুখের ব্রণ দূর করার উপায়।
পেজ সূচিপত্র-নিচের যে অংশ পড়তে চান ক্লিক করুন
মুখের ব্রণ কেন হয়
আমরা হয়তো অনেকেই জানি না মুখে ব্রণ কেন হয়।মূলত আমাদের মুখ খুব ভালোমতো পরিষ্কার না করা হলে জীবাণু ব্যাকটেরিয়ার আবাসস্থল তৈরি হয় যার ফলে আমাদের মুখে কপালে গালে ব্রনের দেখা দেয়।আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন না কিন্তু এটাই সত্যি যে,আমাদের শুয়ে থাকা বালিশে যে ময়লা থাকে সে ময়লা আমাদের মুখে ত্বকের জন্য অনেক ক্ষতিকারক।ত্বকের তেল ও সিবাম মিলেমিশে মুখ বিশেষ করে থুতনিতে ব্রণ সৃষ্টি বেশি হয়।
মানসিক চাপ বিষের মতোই ভয়ঙ্কর এর ফলেও ব্রণের দেখা দিতে পারে।মোবাইল ফোনের নোংরা স্কিন এর জীবাণু থেকেও ব্রণ হয়। ব্রণ বা অ্যাকনি ভালগারিস সাধারণ কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ত্বকের রোগ।বয়স,লিঙ্গ,আবহাওয়া,খাদ্যভাস,লাইফ স্টাইল,পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ব্রণ হওয়ার কারণ।সাধারণত বয়সন্ধিত(১৩ থেকে ১৯ বছর) অথবা অন্য কোন কারণে যখন শরীরে এন্ড্রোজেন হরমোন এর অতি বৃদ্ধি ঘটে, ফলে এই জীবাণু বংশবৃদ্ধি করে বহু গুণ।
পাশাপাশি ত্বকের( Inflammation ) সৃষ্টি করে।হলে আমাদের মুখের ত্বকের রন্ধ কেরাটিন প্রোটিন দিয়ে বন্ধ হয়ে যায় এবং মুখে ব্রণের সৃষ্টি হয়।কখনো কখনো সেকেন্ডারি ইনফেকশন হয়ে পুঁজ গর্ত ও দাগের সৃষ্টি হয়। আরো নানান কারণে আমাদের মুখে ব্রণ হতে পারে। নিজে উল্লেখিত করা হলো।যেমনঃ-
- ত্বকের অযত্ন ও অবহেলা
- হরমোনের পরিবর্তন
- অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড গ্রহণ
- রাত জাগা, অতিরিক্ত যা কফি চা কফি খাওয়া
- প্রয়োজনের থেকে কম ঘুম হওয়া
- ব্রণ আক্রান্তদের তোয়েলা ব্যবহার করা
- অতিরিক্ত টেনশন বা দুশ্চিন্তা মগ্ন হওয়া
- অতিরিক্ত রোদে বেশি বের হওয়া, ইত্যাদি আরও নানান কারণে ব্রণ হতে পারে
মুখের ব্রণ দূর করার ১০টি ঘরোয়া উপায়
বর্তমানে মুখের ব্রণ নিয়ে আমরা সবাই অনেক চিন্তিত এবং হতাশ।মুখের ব্রণ দূর করার জন্য আমরা অনেকেই নানান ধরনের ক্রিম ব্যবহার করে থাকি।ক্রিম ব্যবহারের ফলে অনেক জনের ভালো হয় আবার অনেক জনের ভালো না হয়ে বেশি হয়ে যায়।তাই এক্ষেত্রে আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি ব্রণ দূর করার জন্য ১০টি ঘরোয়া উপায়।তাই চলুন আর দেরি না করে মনোযোগ দিয়ে পড়ুন উপায় গুলো কি কি।
- প্রতিদিন বাইরে থেকে আসার পর পরই পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ সুন্দরভাবে ধরে নিতে হবে
- যদি পারেন বাইরে থেকে আসার পর প্রথমে হালকা গরম কুসুম পানি দিয়ে মুখ ধোয়ার চেষ্টা করবেন
- পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধোয়ার পর আপনার উক্ত ব্যবহারকিত ফেসওয়াশ টি ব্যবহার করবেন
- সময় থাকলে মুলতানি মাটি, লেবুর রস ও টক দই একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন।এরপর সম্পূর্ণ মুখে লাগিয়ে রাখুন এবং ১৫থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন।এরপর শুকিয়ে ঠান্ডা পানি দিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন
- দারুচিনির গুড়া ও মধু একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন।এরপর ব্রণের উপর ডট করে লাগান। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন
- সমপরিমাণ বাটা কাঁচা হলুদ ও চন্দন গুড়ো নিয়ে এবং পরিমাণ মতো গোলাপজল মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে মুখে লাগাতে হবে।কে যাওয়ার পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন
- প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাবার আগে টুথপেস্ট হাতের আঙ্গুলে সামান্য পরিমাণ নিয়ে ব্রণের উপর এপ্লাই করুন।এরপর সকালে পরিষ্কার ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন
- প্রতিদিন অন্তত দুই টুকরা বরফ নিয়ে ব্রণের উপর ম্যাসাজ করুন।খুব তাড়াতাড়ি ব্রণ থেকে মুক্তি পাবেন
- ২ চা চামচ আপেল পেস্ট এর সাথে ১চা চামচ মধু মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে মুখে লাগান এবং১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।আপেল পেস্ট ব্রন দূর করতে খুবই কার্যকারী
- ৫ থেকে ৬টা নিমপাতা নিন।পাতাগুলো পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে পেস্ট তৈরি করুন এবং এর সাথে ২ চা চামচ এলোভেরা জেল ও ১ চা চামচ চিনি মিশিয়ে ফেসপ্যাক বানিয়ে মুখে লাগান এরপর ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন
- খাদ্যভাস এর মাধ্যমেও কিন্তু ব্রণ দূর হয়।ঢেঁকি ছাঁকা বাদামী চাল আমাদের স্কিনে ব্রণের প্রবণতা কমে আনার জন্য খুবই কার্যকর।এতে বিদ্যমান রয়েছে ভিটামিন বি প্রোটিন ম্যাগনেসিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
- এর মধ্যে থাকা ভিটামিন বি আমাদের হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে, যা আমাদের ব্রণ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য অনেক সাহায্যকারী
- আমাদের সর্বশেষ ঘরোয়া পদ্ধতি হলোঃ রাতে ঘুমানোর আগে মসুর ডাল ভিজিয়ে বেটে নিতে হবে এরপর এতে কাঁচা হলুদ গুঁড়ো ও নিম পাতা বাটা একসাথে পেস্ট করে মুখে লাগিয়ে নিতে হবে। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ঠান্ডা পানি(ফেসওয়াশ) দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিতে হবে।
ব্রণ হলে কি করবেন ও কি করবেন না
আমাদের মুখে অতিরিক্ত ব্রণ হলে আমরা হতাশ হয়ে চাই কি করব ও কি করবো না। বর্তমান সমাজের লোকগুলো এমন তাদের কথার জন্য আমরা আরো বেশি হতাশ হয়ে যাই। তাই এসব সমস্যায় এত বেশি চিন্তিত না হয়ে ঠান্ডা মাথায় নিজেকে সমস্যা সমাধান বের করতে হবে। চলুন আপনাদের জানিয়ে দেই ব্রণ হলে কি কি করবেন। আপনার যদি রোদে এলার্জি থাকে তাহলে রোদে বেশি বাড়াবেন না। ব্রণে কখনো হাত লাগাবেন না ও ব্রণ ফাটিয়ে দিবেন না।
আপনি যদি মেকআপ ব্যবহার করেন তাহলে তেল ছাড়া অর্থাৎ ওয়াটার বেজড মেকাপ ব্যবহার করবেন। মাথা সবসময় খুশকি মুক্ত রাখার চেষ্টা করুন। নিজে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন এবং নিজের জন্য আলাদা টাওয়াল(তয়েলা) ব্যবহার করুন। রাতে সময় মত ঠিকমতো ঘুমানোর চেষ্টা করুন। সব সময় মানসিক চাপ পরিহার করুন। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ফল ও শাকসবজি খান। বিশেষ করে শরীরের পাশাপাশি মুখে ব্রণ দূর করতে নিয়মিত ৬ থেকে ৭ লিটার পানি পান করুন।
মুখের ব্রণ দূর হলে আপনি যেসব করবেন না= প্রয়োজনীয় কাজ বাদে অপ্রয়োজনীয় রোধে বেড়াবেন না। ফাউন্ডেশন ব্যবহার করবেন না। চুলে এমন ভাবে তেল দেবেন না যাতে চুলের সাথে সাথে মুখটাও তেলতেলে হয়ে যায়। অতিরিক্ত তেল ঘি ও মসলা খাবেন না। উল্লেখিত এসব বিষয়গুলো যদি আপনি নিয়মিত ঠিকমতো পালন করেন আশা করা যায় আপনার মুখের ব্রণ অতি দ্রুতই ঠিক হয়ে যাবে এবং এক নতুন উজ্জ্বল চেহারার অধিকারী হবেন।
মুখের ব্রণ দূর করতে কেন চিকিৎসা করাবেন
ব্রণ হলে আমাদের উচিত প্রথমে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া।ব্রণেরর চিকিৎসা না করালে অনেক সময় ব্রণ আমাদের ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। ত্বকে গভীর প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে।আর ব্রণ হলে চেহারা খারাপ দেখানোর কারণে আমরা অনেকে হতাশ হয়ে পড়ি।রাতে ঘুমানোর সময় ভালো করে মুখ ধুয়ে ব্রণ গুলোর উপর চিকিৎসকের পরামর্শ মতে জেল লাগানো যেতে পারে।দুই তিন দিন জেল লাগানোর পর ব্রণ হালকা হয়ে ঠিক হয়ে যায়।
চুলকানি বা লাল ভাব বেশি হলে ব্যবহার করা বন্ধ করে দিতে হবে।কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে তা দূর করতে হবে।ঝাল মসলাযুক্ত ও তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।হালকা খাবার শাকসবজি ফলমূল ও প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।আপনি যদি পুষ্টিহীনতায় ভুগেন তাহলে ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার বেশি বেশি খেতে হবে।মাথায় যদি খুশকি থাকে তাহলে অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করে খুশকি দূর করতে হবে।ব্রুনের তীব্রতা বেশি হলে চিকিৎসকের মতামত নিয়ে
প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করতে হবে।ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ব্রণের জন্য অন্যের কথা শুনে বা নিজের পছন্দ সই কোন ওষুধ লাগাবেন না।কতটা বেশি ভ্রুণ হয়েছে তার উপর নির্ভর করে খাবার ও লাগানোর জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দেওয়া হয়। তবে ব্রণের চিকিৎসা সময় সাপেক্ষ।তাই ধৈর্য ধরতে হবে আপনাকে এবং বিশেষ করে মাথায় রাখবেন হঠাৎ করে চিকিৎসা পদ্ধতি বা ডাক্তার বদলাবেন না এতে করে আপনার সমস্যা আরো বেশি হতে পারে।
ব্রণের চিকিৎসা ও ব্রণ থেকে মুক্তির উপায়
সব ধরনের প্রসাধনী বর্জন করতে হবে।নখ দিয়ে খোটা খুটি করা যাবে না।অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্রণ আপনি আপনি সেরে যায়।দিনে দুই থেকে তিনবার ফেসওয়াশ অথবা সাবান দিয়ে মুখ ধুতে হবে।আমরা অনেকেই আছি যারা মুখে ব্রণ হলে সাবান ব্যবহার করা বন্ধ করে দেই অথচ আমাদের এটা জানাই নেই যে এই সময় সাবান ব্যবহার করলে কতটা উপকার পাওয়া যাবে।এই সময় সাবান আমাদের মুখের তৈলাক্ত ভাব দূর করে এবং ব্রণ বেড়ে উঠতে প্রতিরোধ করে এবং লোককূপ পরিষ্কার রাখে।
ব্রণ থেকে মুক্তির উপায়= কিছু নিয়ম অবলম্বন করলে মুখের ব্রণ দূর করা সম্ভব।অনেকের ধারণা বিশেষ কোনো খাবার খেলেই ব্রণ হয়।আসলে এই কথাটা একদমই সঠিক নই।কোন খাবার খেলে যদি ব্রণের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে তবে সে খাবারটি আমাদের বাদ দিতে হবে।তবে প্রচুর ফর্মুল ও পানি খেতে হবে।মুখে বেশি ব্রণ থাকলে রাসায়নিক কোন উপাদান বা কসমেটিক ব্যবহার করা মোটেও ঠিক না।যত সম্ভব প্রাকৃতিক জিনিস বা হারবাল জিনিস ব্যবহার করা।
কারণ এতে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।বেশিরভাগ ব্রণ নিজস্ব পরীক্ষার মাধ্যমে সেরে ফেলা সম্ভব। মূলত ব্রণের জন্য সবচেয়ে বড় ওষুধ হল অপেক্ষা করা।ব্রণ নিয়ে কখনোই বেশি চিন্তা করা যাবে না।দু একটা হবে আবার একাই চলে যাবে।তবে অতিরিক্ত ব্রণ হলে এটি চিন্তার বিষয় বটে তবে এটা নিয়ে চিন্তা না করাই ভালো।তাই আপনি আপনার ব্রণের সমস্যার সমাধানের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী ও অতি মূল্যবান।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক,স্যার/ম্যাম আজকের আলোচনার বিষয় ছিল কিভাবে মুখের ব্রণ দূর করা সম্ভব ও তার প্রতিকার প্রতিরোধ সম্পর্কে।আশা করা যায় আজকের আর্টিকেল থেকে আপনারা প্রাকৃতিক উপায়ে মুখের ব্রণ দূর করতে পারবেন।সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়লে মুখের ব্রণের সমস্যার সমাধান হওয়ার অনেক টিপস ও ট্রিকস জানতে পারবেন। কারণ আমি আর্টিকেলের সম্পূর্ণ কথাগুলো নিজে মেনে উপকৃত হয়েছি।
তাই আপনারা যারা চিন্তিত ছিলেন মুখের ব্রণ নিয়ে তাদের জন্য আজকের সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি। আপনার যদি আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে এবং উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে এসব বিষয় সম্পর্কে জানানোর জন্য আরেকজনকে শেয়ার করে দিবেন এতে করে যেন তারা উপকৃত হতে পারে।আর এই সংক্রান্ত আপনাদের আরো কিছু জানার থাকলে অতি অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানিয়ে যাবেন আমরা আপনাকে দ্রুত আপনার তথ্য জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url