জেনে নিন ইসলাম সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা
আমরা যারা মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেছি তারা সকলে জানি ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে বহু যুগ আগে কেউ অবগত ছিলনা। মহান আল্লাহ যুগে যুগে নবি-রাসুলগনদের পাঠিয়েছেন ইসলাম ধর্ম প্রচার করার জন্য। ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে গিয়ে নবি-রাসুলগন অনেক কষ্ট এবং আত্মত্যাগ করেছেন।
আর আমরা ইসলাম ধর্ম প্রচার এবং ইসলাম ধর্মের পবিত্র কিছু স্থান তৈরির ঘটনা আমাদের পরিবার পরিজনের মুখে গল্প শুনে এবং বই পস্তুক পড়ে জেনেছি। কিন্তু এখনও আমরা অনেকে আছি ইসলামের ইতিহাসে অনেক ঘটে যাওয়া ঘটনা জানিনা।তাই মুসলিম হিসেবে আমাদের উচিত এইসব ঘটনা সম্পর্কে অবগত থাকা।
পেজ সূচিপত্রঃ
'জমজম' কূপের খননকার্য সম্পর্কিত ঘটনা
আবু তালিবের কাছে সর্বশেষ কুরাইশ প্রতিনিধি দলের আগমন
মক্কায় অবস্থানকাল এবং দাওয়াতি কার্যক্রম দাওয়াতের কার্যকাল ও পর্যায়
'জমজম' কূপের খননকার্য সম্পর্কিত ঘটনা
তারপর ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে তিনি নির্দিষ্ট স্থানে খননকার্য আরম্ভ করে দেন। খননকার্য চলাকালে কূপ থেকে সেসব জিনিসপত্র উত্তোলন করা হয় যা বনু জুরহুম গোত্র মক্কা ছেড়ে যাওয়ার সময় কূপের মধ্যে নিক্ষেপ করেছিল।
জমজম কূপ খননকালে আরো একটি ঘটনার উদ্ভব হয়, যখন কূপটি প্রকাশিত হয় তখন কুরাইশগণ আব্দুল মুত্তালিবের সাথে বিবাদ আরম্ভ করে এবং দাবি করে যে, খননকার্যে তাদেরকেও অংশগ্রহণ করতে দিতে হবে।
যে ছিল ভবিষ্যদ্বক্তা-তার নিকট যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং এতদুদ্দেশ্যে মক্কা থেকে যাত্রা শুরু করে।
কিন্তু পথিমধ্যে তারা এমন কতকগুলো নিদর্শন প্রত্যক্ষ করে, যাতে তাদের নিকট এটা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা জমজম কূপের খননকার্য আব্দুল মুত্তালিবের জন্যই নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। তাই তারা আর অগ্রসর না হয়ে মক্কায় ফিরে এলো।
উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতেই আব্দুল মুত্তালিব মানত করেছিলেন, আল্লাহ তায়ালা যদি অনুগ্রহ করে তাকে দশটি পুত্রসন্তান দান করেন এবং সকলেই প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে নিজেকে আত্নরক্ষা করতে সক্ষম হয়,তাহলে তিনি তার একটি সন্তানকে বাইতুল্লাহর জন্য উৎসর্গ করে দিবেন।
আবু তালিবের কাছে সর্বশেষ কুরাইশ প্রতিনিধি দলের আগমন
বিগত কয়েক বছর যাবৎ নানা বিপদ আপদের মধ্যে দিয়ে দিন যাপন করার ফলে এবং বিশেষ করে গিরি_পর্বতে তিন বছর যাবৎ অবর্ণীয় অভাব-অনটনের মধ্যে বন্দী জীবন যাপন করার ফলে তার শক্তি -সামর্থ প্রায় নিঃশেষিত হয়ে পড়েছিল এবং কোমর বেঁকে গিয়েছিল।
এ কারনে আবু তালিবের বেঁচে থাকা অবস্থায়ই মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে কোনো একটা সিদ্ধান্ত হয়ে যাওয়া উচিত। এই ব্যাপারে তিনি কিছুটা সুযোগ -সুবিধাও দিতে পারেন; যা দিতে তিনি রাজি ছিলেন না।
উক্ত চিন্তা-ভাবনার প্রেক্ষিতে একটি কুরাইশ প্রতিনিধিদল আবু তালিবের নিকট গিয়ে উপস্থিত হলো। এটিই ছিল তার নিকট এই ধরনের সর্বশেষ প্রতিনিধি দল। ইবনে ইসহাক এবং অন্যান্যদের বর্ণনাসূত্রে জানা যায়, যখন অসুস্থ আবু তালিব শয্যাগত হয়ে পড়লেন
এবং দিনে দিনে তাঁর অবস্থা অবনতির দিকে যেতে লাগলো, তখন করাইশরা এই মর্মে পরষ্পর বলাবলি করতে লাগলো যে, হামজা ও ওমর মুসলমান হয়ে গিয়েছে এবং মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ধর্ম বিভিন্ন কুরাইশ গোত্রে বিস্তার লাভ করেছে।
সুতরাং চলো আমরা আবু তালিবের নিকট গিয়ে তাকে তার ভাতিজার ধর্ম প্রচার করা থেকে বিরত রাখার ব্যাপারে একটি অঙ্গীকার আদায়ের কথা বলি এবং আমাদের পক্ষ থেকেও কোনো অনিষ্ট না করার ব্যাপারে তার অনুকূলে একটি অঙ্গীকারনামা সম্পাদনা করে নিই।
কারণ এই ব্যাপারে আমরা অত্যন্ত ভীত এবং আতঙ্কিত যে,এভাবে মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রচারকার্য অব্যাহত রাখলে লোকজন তার ধর্মমত গ্রহন করে আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
অন্য এক বর্ণনায় কুরাইশদের বক্তব্য এই মর্মে তুলে ধরা হয়েছে যে, আমাদের ভয় হচ্ছে যে,বৃদ্ধ আবু তালিব মৃত্যুবরন করলে এবং তারপর মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাথে কোনো দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়ে গেলে আরবের লোকেরা আমাদের নিন্দা করবে এবং বলবে যে, তারা মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু
আলাপ-আলোচনা ও মতবিনিময় করল। কুরাইশদের মধ্য থেকে বিশিষ্ট এবং সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়ে এই প্রতিনিধিদল গঠিত হয়েছে।
বিশেষভাবে উল্লেখ যোগ্য ব্যক্তিগণের মধ্যে ছিল উতবা বিন রাবিয়াহ, শায়বা বিন রাবিয়াহ, আবু জাহেল বিন হিশাম,উমাইয়া বিন খালফ এবং আবু সুফিয়ার বিন হারব। এই প্রতিনিধিদলে ছিল মোট পঁচিশজন সদস্য।
উক্ত প্রতিনিধিদল বৃদ্ধ আবু তালিবের নিকট উপস্থিত হয়ে তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলল, হে আবু তালিব! আমাদের মধ্যে মান-মর্যাদার যে আসনে আপনি অধিষ্ঠিত রয়েছেন তা আপনি সম্যক অবগত রয়েছেন এবং বর্তমানে যে অবস্থার মধ্য দিয়ে কালাতিপাত করছেন তা-ও আপনার নিকট সুস্পষ্ট।
আপনি জীবনের অন্তিম পর্যায়ে অতিবাহিত করছেন। এদিকে আপনার ভাতিজা এবং আমাদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব -সংঘাত ও মতবিরোধ চলে আসছে তা-ও আপনার অজানা নেই। আমরা চাচ্ছি যে, আপনি তাকে ডেকে এনে তার সম্পর্কে আমাদের নিকট থেকে এবং আমাদের সম্পর্কে তার নিকট থেকে
অঙ্গীকার গ্রহণ করবেন৷ এই অঙ্গীকারের উদ্দেশ্য হবে আমরা তার থেকে এবং সেই আমাদের থেকে পৃথক থাকবে। অর্থাৎ, আমাদের ধর্মমতের ওপর সে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করবে না এবং আমরাও তার ধর্মমতের ওপর কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করবো না।
তোমাকে কিছু অঙ্গীকার প্রদান করবে এবং তোমাকেও তাদের কিছু অঙ্গীকার প্রদান করতে হবে।অর্থাৎ,ধর্মমতের ব্যাপারে তারা তোমার প্রতি কোনো কটাক্ষ করবে না এবং তুমিও তাদের প্রতি কোনো ধরনের কটাক্ষ করবে না।
প্রত্যুত্তরে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিনিধিদলকে সম্মোধন করে বললেন-আমি যদি এমন একটি প্রস্তাব পেশ করি যা মেনে নিলে গোটা আরবের সম্রাট হওয়া যাবে এবং অনারব অধীনস্থ হয়ে যাবে, তাহলে এ ব্যাপারে আপনাদের মতামত কি হতে পারে বলুন?
কোন কোন বর্ণনায় এমনটি বলা হয়েছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চাচা আবু তালিব কে সম্মোধন করে বলেছেন - চাচাজান! আমি তাদের নিকট থেকে এমন এক প্রস্তাবের প্রতি স্বীকৃতি ও সমর্থন চাই,যা মেনে নিলে সমগ্র আরব জাহান তাদের অধীনস্থ হয়ে যাবে এবং তাদেরকে কর(ট্যাক্স) প্রদান করে বসবাস করতে বাধ্য হবে।
মক্কায় অবস্থানকাল এবং দাওয়াতি কার্যক্রম দাওয়াতের কার্যকাল ও পর্যায়
এবং ভিন্নতর বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যতম। অংশ দুটো হচ্ছে যথাক্রমে -
১. মক্কায় অবস্থানকাল ( প্রায় তের বছর)।
2. মদিনায় অবস্থানকাল (দশ বছর)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মক্কায় অবস্থানকাল এবং কর্মপ্রক্রিয়াকে তিনটি স্তরে বিভক্ত করে আলোচনা করা যেতে পারে। সেগুলো হচ্ছে -
১. গোপন দাওয়াতি কার্যক্রম [ তিন বছর]।
2. প্রকাশ্য দাওয়াত [ চতুর্থ বছর থেকে দশম বছরের শেষ নাগাদ]।
3. মক্কার বাইরে ইসলামের দাওয়াত প্রদান ও বিস্তৃতি [ নবুয়তের দশম বর্ষের শেষ ভাগ হতে হিজরত পর্যন্ত]
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url