OrdinaryITPostAd

কালোজিরা আমাদের জন্য কতোটা প্রয়োজনীয় জেনে নিন

আমরা সকলে কালোজিরা নামটার সঙ্গে ভীষণভাবে পরিচিত। কিন্তু আমরা কি জানি কালোজিরা কতোটা প্রয়োজনীয় আমাদের সুস্থ রাখার জন্য। আমাদের জীবনে কালোজিরার ভূমিকা অপরিহার্য।


কালোজিরা জন্য কতোটা প্রয়োজনীয়




কালোজিরা হলো সকল রোগের মহৌষধ কেননা কালোজিরা বিভিন্ন রোগ থেকে আমাদের রক্ষা করে। তাই কালোজিরা সম্পর্কে আমাদের সকলের ধারণা থাকাটা অত্যন্ত জরুরি।

পেজ সূচিপত্র

কালোজিরার মধ্যে কি কি উপাদান রয়েছে 

ছোট ছোট এই শস্যদানার মধ্যে কি এমন আছে, কেন এই শস্যদানার এতো ক্ষমতা এই প্রশ্নগুলো অবশ্যই আমাদের মনে আসতেই পারে। আমরা অনেকেই এই সম্পর্কে জানি আবার অনেকেই জানিনা। তবে কালোজিরার মধ্যে কি কি উপাদান রয়েছে জানাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

কালোজিরার ছোট্ট ছোট্ট দানায় কতখানি গুন আছে জানলে অবাক হবেন। কি নেয় এই ছোট্ট একটা দানার মধ্যে। কালোজিরার মধ্যে রয়েছেঃ 1. ক্যালসিয়াম
2. পটাসিয়াম
3. সোডিয়াম
4. জিংক
5. আয়রন
6. ফসফরাস
7. ফসফেট
8. ভিটামিন-এ
9. ভিটামিন-বি
10. ভিটামিন-বি২
11. ভিটামিন-সি

খাবারের স্বাদে কালোজিরা যে ভূমিকা রাখে

কালোজিরা খাবারেরও অনেক স্বাদ বাড়াতে সাহায্য করে। আমরা সাধারনত অনেক খাবারে কালোজিরা ব্যবহার করে থাকি। বিশেষ করে কিছু কিছু খাবারে কালোজিরা না দিলে অসম্পূর্ণ মনে হয়। আমরা বিভিন্ন তরকারিতে পাঁচফোড়ন ব্যবহার করে থাকি। 

পাঁচফোড়নের মধ্যে মূল উপাদান হলো কালোজিরা। আর এই পাঁচফোড়ন আমরা ডালে,নিরামিষ সবজিতে দিয়ে থাকি। অনেকে আবার সব তরকারিতে পাঁচফোড়ন দিয়ে তেলে দেয়। পাঁচফোড়ন ছাড়াও তরকারি রান্না করার সময় যখন পিঁয়াজ ভাজা হয় তার আগে তেলে কয়েকটা কালোজিরা ছেরে দেয়

তরকারির স্বাদ বাড়ানোর জন্য অনেকেই। আবার আমরা অনেক পিঠা তৈরিতে কালোজিরা ব্যবহার করে থাকি এতে করে পিঠাগুলো দেখতেও ভাল লাগে পিঠার স্বাদও বাড়ে। বেশকিছু ভাজাপোড়ার ক্ষেত্রেও কালোজিরা বেশ ভূমিকা রাখে। কালোজিরার ভর্তা করা হয় যা খাইতে অনেক সুস্বাদু এবং উপকারী শরীরের জন্য।

কালোজিরা তেলের উপকারিতা

আমরা বর্তমানে প্রায় সকলে একটা সমস্যায় ভুগি সেইটা হলো চুল পরা ও চুল পাকা। অল্প বয়সে অনেক ছেলেমেয়ের চুল পেকে যাচ্ছে এবং চুল পড়ে যাচ্ছে। আর আমি মনে করি বর্তমান সময়ে এইটা একটা অনেক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা চুল ছাড়া প্রত্যেকটা মানুষ বেমানান। চুল না থাকলে

চেহারার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। তাই আমরা এই সমস্যার সমাধান খুজতে নানান তেল সাম্পু ব্যবহার করে থাকি কিন্তু এই সমস্যার সমাধানও আমরা কালোজিরা থেকে পেয়ে থাকি। এছাড়াও আরো অনেক কাজে আসে কালোজিরা৷ কালোজিরা থেকে তৈরি হয় এক উপকারী তেল। কালজিরা তেলের উপকারিতা নিম্নে দেওয়া হলোঃ

১. কালোজিরার তেল সুগার লেভেল কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
২. বড় বা ছোট বাচ্চাদের মালিশের ক্ষেত্রে এই তেল টা ব্যবহার করা যায় ।
৩. নিয়ম অনুযায়ী তেলটা বানালে খাওয়ার জন্যও উপযোগী হবে।
৪. হোমম্যাড কালোজিরা তেল! ১০০% কার্যকরী চুল পড়া বন্ধ করে।
৫. এক গ্লাস গরম দুধের সাথে এক চামচ কালোজিরা তেলে খেলে আমাদের মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়।যার জন্য আমাদের ভুলে যাওয়ার সমস্যা বা কিছু মনে না রাখার সমস্যা এটা অনেক খানি কেটে যায় নিয়মিত এই তেলটা খেলে।
৬. যাদের সর্দি লেগে থাকে সবসময় তাদের ক্ষেত্রে কালোজিরার তেল বিশেষ ভূমিকা রাখে।
৭. এই তেল মালিশে মাথা ব্যাথা, বুক ব্যাথা,  পিঠ ব্যাথা সারিয়ে তুলতে সক্ষম। তবে তেল টা ভালো মতো বুকে এবং কানের পিঠে মালিশ করলে মাথা ব্যাথা অনেকটা কমে যায় । 

৮. যে কোনো জয়েন্টের ব্যাথা,বাতের ব্যাথা কমিয়ে দেয় এই কালোজিরার তেল।

৯.নিয়মিত কালোজিরা তেল চুলে ব্যবহার করলে পাকা চুল কালো হয়ে যায়।

১০.নিয়মিত এই তেল ব্যবহারের ফলে চুলের গোড়া মজবুত,লম্বা এবং সিল্কি করে।

১১. চুল পড়া রোধ করতে এই তেল দারুণ উপকারী।

আপনাদের সুবিধার্থে কালোজিরা তেল বানানোর নিয়ম দেওয়া হলোঃ 

ভুলভাবে নয় সঠিক পদ্ধতিতে ঘরে বসে নিজেই মহৌষধী  কালো জিরার তেল বানানো শিখুন 

প্রথমে আগে থেকে শুকিয়ে রাখা কালোজিরা ১/৪ কাপ  নিতে হবে এর পর এর সাথে এড করতে হবে  অলিভ অয়েল ১/৪ কাপ অলিভ অয়েল তেল না দিলে  বিপরীতে কোকোনাট  অয়েল,অ্যালমন্ড অয়েল, বা খাঁটি সরিষার তেল ব্যবহার করা যাবে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না। 

তবে অলিভ অয়েল তেল দেয়াটা ভালো। এখন কালোজিরা আর তেল ভালোমতো ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এবং কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে যতক্ষণ পর্যন্ত না কালোজিরা আর তেল ভালোভাবে ব্লেন্ড  হচ্ছে তো ব্লেন্ড করা হয়ে গেলে একটা পরিষ্কার কাঁচের বোতল বা প্লাস্টিকের বোতল নিতে হবে। 

অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে কাঁচের বোতল নিতে কেননা,কাঁচের বোতলে তেলের মান টা ভালো থাকে। এইবার  ব্লেন্ড করা তেল  কাচের বোতলের মধ্যে পুরোটা ঢেলে নিতে হবে তারপরে  বোতলের ঢাকনা দিয়ে মুখটা লাগিয়ে রেখে দিতে হবে। 

এখন কিন্তুু এই তেল টা ব্যবহারের উপযোগী নয় কমপক্ষে ১ সপ্তাহ মানে একটানা ৭ দিন কড়া রোদে রাখতে হবে। কড়া রোদে রাখার পরে দেখা যাবে বোতলের তলানিতে  কালোজিরার যে অবশিষ্ট  অংশটা এটা জড়ো হয়ে যাবে ঠিক তখনি তেল টা ছেঁকে নিতে হবে।

আর হ্যাঁ এক সপ্তাহ পর তেল টা পুরোপুরি চুলে ব্যবহারের জন্য উপযোগী হয়ে যাবে।  

কালোজিরা তেলের ব্যবহারঃ

১. সপ্তাহে এই বানানো তেল দু-বার ব্যবহার করা যাবে।
২. দু থেকে তিন ঘন্টা তেলটা মাথায় রেখে পছন্দমতো শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। 

চিকিৎসা ক্ষেত্রে কালোজিরার কার্যকারিতা 

কালোজিরা চিকিৎসা ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ  ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন বিজ্ঞানীদ্বারা প্রমানিত যে অনেক রোগের সমাধান এই কালোজিরা। কালোজিরায় আছে  অ্যান্টিমাইক্রোরিয়াল এজেন্ট যা শরীরের রোগ জীবাণু ধ্বংস করতে সাহায্য করে। কালোজিরেতে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।

কালোজিরাকে অ্যান্টিবায়োটিক বলা হয়ে থাকে। 

চিকিৎসা ক্ষেত্রে কালোজিরার কার্যকারিতা



নিয়মিত কালোজিরা খাইলে কি কি রোগের সমাধান পাওয়া যায় তা নিম্নে দেওয়া হলোঃ

১. কাজের ক্লান্তি , দুর্বল অনুভব , ঘুম ঘুম ভাব , ঝিমঝিম ভাব এগুলো কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে ।
২. রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে ।
৩. শিশুদের ব্রেন বিকাশে ও দৈহিক বিকাশে ভূমিকা রাখে ।
৪. ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করতে সাহায্য করে এবং ক্যান্সার যাতে না হয় সেই দিকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ।
৫. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ।
৬. যাদের হার্টের ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য বেশ উপকারী কালোজিরা ও মধু ।
৭. মাথার চুল উঠে যাওয়া এবং ত্বকের সৌন্দর্য ও লাবণ্য বজায় রাখতে মাখলেই হবে না খেতেও হবে কালোজিরা ও মধু ।
৮. হাঁপানি,ফুসফুস ,কাশি ,শ্বাসকষ্ট জনিত রোগের সমাধান করে থাকে কালোজিরা ও মধু ।
৯. কালোজিরা ও মধুতে প্রায় ১০০ টির মত নিউট্রিয়ান ও প্রোটিন থাকে তাই আমাদের শরীরের জন্য কালোজিরা ও মধু খাওয়া প্রয়োজন ।
১০. বাতজ্বর ও যেকোনো ব্যথার প্রতিষেধক কালোজিরা ও মধু ।
১১. কালোজিরা ও মধু খেলে হরমোনের বৃদ্ধি হয় ।
১২. কালোজিরা ও মধু রক্তশূন্যতা দূর করে এবং রক্ত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে ।
১৩. চোখে ঝাপসা দেখতে পাওয়া দূর করে দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
১৪. ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমায় এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায় ।
১৫. অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে ।
১৬. গ্যাস্ট্রিক ও পেট ফাঁপা দূর করে খিদে বাড়াতে সাহায্য করে।

কালোজিরা তেল খাওয়ার নিয়মঃ

1. কালোজিরার তেল গরম পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়।
2. মধুর সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
3. তুলসি পাতার রস করে তার সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।

সকালে খালি পেটে কালোজিরে খাওয়ার উপকারীতাঃ

১. সকালে খালি পেটে নিয়মিত কালোজিরে খেলে গ্যাসটিকের সমস্যা আরোগ্য হয়।

২. হজম ক্ষমতার উন্নতি করতে সাহায্য করে।

৩. ক্ষুদা মন্দা দূর হয়। 

৪. গর্ভঅবস্থায় ব্যথা সারিয়ে তোলে । 

৫. চেহারায় বয়সের ছাপ থাকবে না।

৬. সকালে খালি পেটে সামান্য পরিমান কালোজিরে খেলে ক্লান্ত বোধ আসেনা।

কালোজিরা সম্পর্কিত যে হাদিস বর্ণিত আছে 

ইসলাম ধর্মে কালোজিরাকে মহৌষধ  হিসেবে ধরা হয়। ইসলাম ধর্মে উল্লিখিত আছে কালোজিরা নিয়মিত খাইলে মৃত্যু ছাড়া কোনো রোগ হওয়ার সম্ভবনা থাকে না। আমাদের প্রিয়নবি (সাঃ) বলেছেনঃ একমাত্র মৃত্যু ছাড়া  সকল রোগের ঔষধ এই কালোজিরা।


কালোজিরা সম্পর্কিত যে হাদিস বর্ণিত আছে


অব্যর্থ রোগ নিরাময়ের উপকরণ হিসাবে ধরে ইসলাম ধর্মের মুসলিমরা। আর একটি  হাদিস আছে কালোজিরা নিয়ে আয়েশা (রাঃ)  হতে বর্ণিত, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি অয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি এ কালোজিরা মৃত্যু ব্যতিত সকল রোগের ঔষধ। এছাড়াও ৯৯ টি রোগের ঔষধ এই কালোজিরা।

আয়ুর্বেদ এবং ইউনানি মতে কালোজিরা 

আয়ুর্বেদ এবং ইউনানি মতে কালোজিরা নানা রকম রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ইউনানি মতে নারীদের পিরিয়ড সমস্যায় কালোজিরা বাটা খাওয়ার নিয়ম আছে। এছাড়াও প্রসূতি মায়ের জন্য স্তনে দুগ্ধ বাড়ানোর জন্য কালোজিরা খাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url